রোবট থেকে রোবটিক্স ? বাংলাদেশে রোবটিক্সের প্রাপ্তি ও ভবিষ্যত জেনে নিন? পার্ট - ০১
বন্ধুরা আজ আমাদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে রোবটিক্স। উইকিপিডিয়ার মতে- রোবটিক্স হচ্ছে প্রযুক্তির একটি শাখা মাত্র, রোবট সাধারণত ডিজাইন, নির্মাণ, কার্যক্রম ও প্রয়োগ নিয়ে কাজ করে। New Collegiate ডিকশনারীর মতে “রোবট হচ্ছে একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা যা মানুষ যেভাবে কাজ করতে পারে সেভাবে কাজ করে অথবা এর কাজ দেখে মনে হয় এর বুদ্ধিমত্তা আছে।
সর্বপ্রথম ডিজিটাল ও প্রোগ্রামেবল রোবট আবিষ্কার করেন জর্জ ডেবল, এজন্য তাকে রোবটিক্সের জনক বলা হয়।বর্তমানে বিজ্ঞানের ভাষায় রোবট কোন সাইন্স ফিকশনের গল্প নয় কেননা রোবট এখন মানুষের মতো সকল কাজেই করতে পারে। যেমন ধরুন গাড়ি তৈরি, ঔষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পনিতে, কারখানায় ভারি মালামাল বহন ও মাইনিং থেকে শুরু করে রকেট সকল কিছুই যেন রোবট করে নিমিশেই।
তাই আজ আমরা জানবো রোবট থেকে রোবটিক্স এর বিস্তারিত।
১। রোবট এবং রোবটিক্স কী?
২। রোবটিক্স আবিষ্কারের ইতিহাস।
৩। রোবটিক্স এর প্রকারভেদ এবং ব্যবহার?
৪। রোবট এর সুবিধা, অসুবিধা।
৫। বাংলাদেশে রোবটিক্সের প্রাপ্তি ও রোবটিক্সের ভবিষ্যত্।
৬। আপানি কোথায় গেলে শিখতে পারবেন রোবটিক্স?
রোবট এবং রোবটিক্স কী?
রোবট হলো মানুষের তৈরি এক প্রকার স্বয়ংকৃত যন্ত্র যা মানুষের কথা মতো কাজ করে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যে শাখা রোবটের ডিজাইন, নির্মাণ এবং এর প্রয়োগ বিধি নিয়ে আলোচনা করে তাকেই রোবটিক্স বলে হয়।
রোবটিক্স এসেছে রোবট থেকে আর এটি প্রবর্তিত হয় চেকোস্লোভাকিয়ান লেখক ও নাট্যকার কারেল কাপের এর একটি নাটক থেকে প্রথম রোবট শব্দটি প্রকাশ পায় যার নাম ছিল Rossum’s Unicersal Robots (RUR) যা ১৯২০ সালে প্রকাশিত হয়।
রোবট শব্দটি চেক শব্দ যা রোবটা থেকে এসেছে, যার আপেক্ষিক অর্থ ক্লান্তকর শ্রম। ১৯৪১ সালে বিজ্ঞানী কথা সাহিত্যিক আইজাক আশিমো তা ছোটগল্পে “লিরা” সর্বপ্রথম রোবটিক্স শব্দটি ব্যবহার করেন যার ফলে বর্তমানে আধুনিক রোবটিক্স এর পথপদর্শক তাকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।
রোবট হলো মানুষের তৈরি এক প্রকার স্বয়ংকৃত যন্ত্র যা মানুষের কথা মতো কাজ করে আর রোবটিক্স হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এমন একটি শাখা যেখানে রোবট নিয়ে গবেষনা করা হয়।
আরও পড়ুনঃ জি ডি করুন এখন ঘরে বসে।
রোবটিক্স আবিষ্কারের ইতিহাস।
এছাড়া রোবট সম্পর্কে ৩২০ বছর আগে গ্রিক দার্শনিক এরিষ্টোটাল রোবট সম্পের্কে একটি ধারনা দেন তাঁর ভাষায় “ যদি প্রতিটি যন্ত্রাংশ ও টুলস আদেশ বলে বা তার নিজের ইচ্ছায় (নিধার্রিত প্রোগ্রাম) কোন কাজ প্রার্থিব মানে সম্পন্ন করতে পারবে তখন প্রশিক্ষকের জন্য চাকরে প্রয়োজন হবে না।”
বিজ্ঞানী কথা সাহিত্যিক আইজাক আশিমো তার ছোটগল্প লিরাতে উল্লেখ করেন যে রোবট নিয়ম মেনে কাজ করবে, যা মানব জাতির কোন ক্ষতি করবে না এবং আরো বলেন রোবট বর্নিত শর্ত বঙ্গ না করে মানুষের দেখানো নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবে।
তবে আধুনিক রোবটিক্স এর সূত্রপাত হয় শিল্প বিপ্লবের পরে। প্রথম ইলিক্ট্রনিক রোবট তৈরি করা হয় ১৯৪৮ ও ১৯৪৯ সালে যা জটিল আচারনের ছিল। যা তৈরি করেন ইংল্যান্ডের ব্রিষ্টল ব্রিডল নিউরোলোচজিক্যাল ইন্সটিটিউটের উইলিয়াম গ্রে ওয়াটার।
প্রথম ডিজিটাল প্রোগ্রামযোগ্য রোবট তৈরি করেন ১৯৫৪ সালে র্জজ ডিভোল। তবে আধুনিক নিয়ন্ত্রিত রোবটগুলো তৈরি করে ২০০০ সালে যাতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ধারন করা হয়। আর কার্নেল ইউনিভার্সিটি প্রথম রোবট প্রকাশ করে ২০০৪ সালে যা স্ব-প্রক্রিয়ায় সক্ষম ছিল এবং এটিই বিশ্বের প্রথম রোবট ছিল যা নিজেই নিজের কপি করতে পারতো।
বিশ্বের প্রথম রোবট হচ্ছে ইউমিনেট যা ১৯৫৪ সালে র্জজ ডেভল আবিষ্কার করেন।
১৯৬১ সালে তিনি এটি জেনারেল মোটরস নামের একটি কোম্পানীর কাছে বিক্রি করে দেন। কারণ ইউমিনেটের কাজ ছিল ভারী লোহা লক্কড় ওঠানামা করানো আর ভারী কোন বস্তু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা। ইউনিমেটের হাত ধরেই শুরু হয় বিশ্বের প্রথম আধুনিক স্বয়ংক্রিয় রোবটের যাত্রা। এরপর ১৯৬৬ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম স্বয়ং ক্রিয় স্বায়ত্তশাসিত রোবট তৈরি করেন । যার নাম দেয়া হয়েছিল ‘শেকি’ রোবট। এই রোবটটি কোন টেবিলের বাধাকে কীভাবে অতিক্রম করতে হয় এবং একটি ঘরের চারপাশের দেয়াল গুলোক পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে বাধা বিপত্তি দেখে চলাফেরা করতে সক্ষম ছিল।
বিশ্বে প্রথম নাগরিত্ব লাভ করা রোবট হচ্ছে সুফিয়া। যা প্রস্তুত করা হয়েছে ২৫ অক্টোবর ২০১৭ সালে সৌদি আরবে।
রোবটিক্স এর প্রকারবেদ, ব্যবহার?
ইতিমধ্যে আপনারা রোবট সম্পর্কে বেশ কিছূ তথ্য পেছেন । আমরা জানবো প্রকারভেদ সম্পর্কে তবে রোবটকে শ্রেনিবিন্যাশ করা সহজ না কেনান রোবট সাধারনত সব জায়গায় কাজ করে।
তবে রোবটকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
১। অটোনোমাস রোবট- যে সমস্ত রোবট তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মানুষের নিয়ন্ত্রন ও পরিচালনা ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রোগ্রাম অনুসারে সকল কাজ সর্ম্পূন করতে পারে।
২।সেমি অটোনোমাস রোবট- এই রোবট গুলো মানুষের নিয়ন্ত্রর মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
এছাড়া রোবটের বৈশিষ্ট ও ব্যবহারের বিশেষ শ্রেনি বিন্যাশ আকারে ভাগ করা যায়-
আরও পড়ুনঃ হোয়াটসঅ্যাপ, ইমু, মেসেঞ্জার এবং স্কাইপ বিজ্ঞাপন ছাড়া অটো কল রেকড করুন সহজেই।
বিনোদন রোবটঃ বিনোদনের জন্য রোবটগুলো সাধারনত শিশুদের খেলার জন্য তৈরি করা হয়। এগুলো নাচতে , গাইতে, কথা বলতে পারে এবং শিশুদের সাথে খেলতেও পারে তাই দিন দিন এদের চাহিদা বেড়েই চলছে।
সামরিক রোবটঃ- সামরিক ক্ষাতে ব্যবহারের জন্য এই রোবট গুলো তৈরি করা হয় ।এই রোবট গুলো বোমা নিষ্পত্তি , আগুন নিবানো, উদ্দার কাজ করা ইত্যাদি কাজ করে থাকে। এছাড়া গোপন অপারেশন এর জন্য রোবট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
মেডিকেল রোবটঃ- মেডিকেল রোবট গুলো অতি জটিল অপারেশনের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।এছাড়া ঔষুধ তৈরিতে রোবটের ব্যবহার অপরিহাজ্য।
হিউম্যানোয়েড রোবটঃ- এই রোবট গুলো মানুষের মত করে তৈরি করা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পুর্ন এই রোবট গুলো মানুষের মত কাজ করতে সক্ষম। ইতি মধ্যে এই রোবটের সবচেয়ে বড় উদাহরন হচ্ছে রোবট সোফিয়া এবং রোবট আটলাস। এছাড়া বাংলাদের তৈরি ChondroBot-2 এবং MIST লুনা রোবটিকস একুশ ।
দূর্যোগের প্রতিক্রিয়াঃ- জাপানে ২০১১ সালে ভুমিকম্প ও সুনামি আঘাত্ হানার পর জাপানের পরমানবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্রের ক্ষতি পরীক্ষা করার জন্য পুকবট নামক এক রোবট ব্যবহার করে তার তথ্য জানা যায়। আর তাই কিছু রোবট জরুরি বা বিপজ্জনক কাজে ব্যবহার করার জন্য তৈরি করা হয়।
গ্রাহক রোবটঃ- যে সকল রোবট আপনার প্রতিদিনের কাজে সহযোগিতা করে ।যেমন-
১।কুকুরের মতো দেখতে রোবট ডগ আইবো যা আপনার বাড়ি পাহারা থেকে আপনার প্রতিরক্ষা করতে সক্ষম।
২।আপনার সহকারি হিসেব যাবতিয় কাজে সহযোগিতা করা রোবট হল রোবট সহকারি যা এআই দ্বারা পরিচালিত তাই আপনার আচার ব্যবহার মনিটরিং করার সক্ষমতা আছে।
৩।ঘর পরিষ্কার করার জন্য আমরা ভ্যাকুয়াম মেশিন ব্যবহার করে থাকি যার আদলে তৈরি করা হয়েছে রোম্বা ভ্যাকুয়াম রোবট যা ঘর পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে সকল কাজ করতে সক্ষম।
৪। এছাড়া এখন ঘরের সকল কাজের জন্য বহুল ব্যবহারিত রোবট গুলো হলো - রোবটিক সুইপার, পুল ক্লিনার, রোবটিব ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, রোবটিক সুইপার ইত্যাদি।
মহাকাশ রোবটঃ- মার্স এ নাসা কৃতক পাঠানো জন্য রোবট তৈরি করা হয় যা আকাশে উড়তে, ছবি তুলতে ও হাটতে সক্ষম । সাধারনত সবচেয়ে বেশি ব্যবহারিত স্খান হল এটি যা নাসার বিভিন্ন গভেশনার কাজে ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুনঃ মোবাইলে টূরুকলার/TrueCallerPro আজীবন মেয়াদে প্রিমিয়াম বা গোল্ড করতে চান?
শিল্প রোবটঃ- বর্তমানে বড় বড় শিল্প কারখানায় ভারি ও জটিল কাজ করার জন্য রোবট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এতে সময় ও শ্রম দুটই বাচে। যেমন- কাপড়ের নিখুত ডিজাইন ও রং করার জন্য ব্যবহার করা হয় পেইন্ট রোবট।
রোবটিক্স অনেক বড় একটি বিষয় তবে আজকের আলোচনায় আমরা রোবট সম্পের্কে বেশ কিছু ধারনা লাভ করেছি ।
পরবর্তী আলোচনায় আমরা জানবো -
- রোবট এর সুবিধা, অসুবিধা।
- বাংলাদেশে রোবটিক্সের প্রাপ্তি ও ভবিষ্যত্।
- আপানি কোথায় ভর্তি হলে শিখতে পারবেন রোবটিক্স?
- কিভাবে রোবট তৈরি করবেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
ঢাকা ক্লিক নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url